হাওজা নিউজ এজেন্সি: এই দাবি শুধু অদ্ভুত নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব এবং ন্যূনতম কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অন্য রাষ্ট্রের এমন একতরফা দাবি কার্যত জঙ্গলের আইনের ঘোষণা—যেখানে ন্যায় বা আইন নয়, বরং শক্তিই শেষ কথা।
ভেনেজুয়েলার তেলে নাকি মাযুরা’র (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অধিকার আছে! মাযুরা’র তেল, জমি ও অন্যান্য সম্পদ নাকি ভেনেজুয়েলা অবৈধভাবে চুরি ও জবরদখল করেছে!
এ কেমন উদ্ভট দাবি!? এ কেমন মামা-বাড়ির আবদার!?
এই বক্তব্য আসলে নতুন কিছু নয়। সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা যুগে যুগে একই ভাষায় কথা বলে—সম্পদ যেখানে, দৃষ্টি সেখানেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই ধারারই এক প্রকাশ্য ও বেপরোয়া প্রতিনিধি, যিনি কূটনৈতিক মুখোশ না পরে সরাসরি পেশিশক্তি ও হুমকির ভাষায় কথা বলেন।
গায়ের জোর, বাহুবল ও অবৈধ চাপ প্রয়োগই যেন তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু। তাই ভেনেজুয়েলার তেলসম্পদ নিয়ে তাঁর বক্তব্যকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই; বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতিরই ধারাবাহিক রূপ।
ইতিহাসে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, গাজা, লেবানন, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও সুদান—এই দেশগুলোর রক্তাক্ত অধ্যায় সাক্ষ্য দেয়, কীভাবে ‘গণতন্ত্র’, ‘নিরাপত্তা’ বা ‘স্বার্থ রক্ষা’র অজুহাতে সামরিক হস্তক্ষেপ, অবরোধ ও দখলদারিত্ব চালানো হয়েছে। এসব আগ্রাসনের ফল হয়েছে রাষ্ট্র ধ্বংস, সামাজিক বিপর্যয় এবং লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের প্রাণহানি।
ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রেও সেই একই ছক। অবরোধ, অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক হুমকি—সবকিছুর লক্ষ্য একটাই: প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
এই বাস্তবতায় ট্রাম্প ও মাযুরার আচরণকে আগ্রাসন, দখলদারিত্ব ও আধিপত্যবাদ ছাড়া অন্য কোনো শব্দে ব্যাখ্যা করা কঠিন। লোভী পুঁজিবাদী স্বার্থের কাছে মানবিকতা, ন্যায়বিচার কিংবা আন্তর্জাতিক নীতিমালা—সবই গৌণ।
কিন্তু ইতিহাসের আরেকটি সত্যও বারবার প্রমাণিত হয়েছে—শক্তির জোরে চাপিয়ে দেওয়া আধিপত্য স্থায়ী হয় না। জনগণের ইচ্ছা, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা শেষ পর্যন্ত যেকোনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকেই পরাজিত করে।
আজ ভেনেজুয়েলার জনগণ শুধু নিজেদের তেল নয়, নিজেদের সার্বভৌমত্বও রক্ষা করছে। তাদের এই লড়াই আসলে সব নিপীড়িত জাতির লড়াই—যারা সাম্রাজ্যবাদী লোভের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়।
মাযুরা! মাযুরা! তোমার লোলুপতা, ষড়যন্ত্র, লুন্ঠন, দস্যুতা, রক্ত জড়ানোর ইতিহাস বহু দীর্ঘ, কিন্তু প্রতিরোধের ইতিহাস তার চেয়েও দীর্ঘ।
ট্রাম্প ও মাযুরার সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড আবারও প্রমাণ করে— সাম্রাজ্যবাদ আজও জীবিত, তবে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধও থেমে নেই। এই বাস্তবতা যত দ্রুত বিশ্ব বুঝবে, তত দ্রুতই ন্যায়ের পথে ফেরার সুযোগ তৈরি হবে।
— মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক
আপনার কমেন্ট